Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

বাংলাদেশ অজানা লুকিয়ে থাকা ৮টি দর্শনীয় স্থানসমূহ

 

অজানা বাংলাদেশ: লুকিয়ে থাকা রত্ন ও দর্শনীয় স্থানসমূহ

বাংলাদেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি ছোট্ট দেশ, যেখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে। কিন্তু এখানকার অনেক দর্শনীয় স্থান আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। আজকে আমরা বাংলাদেশের এমন কিছু লুকিয়ে থাকা রত্ন ও পর্যটন স্থানের কথা বলবো, যা হয়তো অনেকেরই জানা নেই, কিন্তু সৌন্দর্যে এবং ইতিহাসে তারা অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

১. বিছনাকান্দি, সিলেট

সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বিছনাকান্দি। এটি মূলত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এবং মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি শিলাপূর্ণ জলপ্রপাত। বর্ষাকালে এখানে পাহাড়ের উপর থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে নিচের শিলাগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যায়, যা পর্যটকদের জন্য এক অসাধারণ দৃশ্য উপহার দেয়। শীতকালে পানি কমে যায়, তবে শিলাগুলোর সৌন্দর্য তখনও অটুট থাকে। শান্ত প্রকৃতির কোলে এই জায়গাটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।

২. রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সিলেট

রাতারগুল হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন, যা সিলেট জেলায় অবস্থিত। এটি বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে, আর শীতকালে পানি নেমে যায়। এই বন মূলত বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল। রাতারগুলের সবুজের সমারোহ ও শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের মনমুগ্ধ করে তোলে। নৌকায় করে বনের ভেতর ভ্রমণ করলে আপনি পানির উপর ভাসমান এক অনন্য অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন।

৩. পান্থুমাই, সিলেট

সিলেটের আরেকটি লুকানো রত্ন হলো পান্থুমাই। এটি ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা একটি ছোট্ট গ্রাম, যেখানে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং সবুজ প্রকৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে। পান্থুমাইয়ের প্রধান আকর্ষণ হলো এখানে অবস্থিত ধলাই জলপ্রপাত। বর্ষার সময় এখানে প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়, যেখানে ধলাই নদী থেকে পানি এসে জলপ্রপাত আকারে নিচে পড়ে। দূর থেকে দেখতে পান্থুমাই যেন এক টুকরো স্বর্গের মতো।

৪. সাজেক ভ্যালি, রাঙ্গামাটি

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের একটি পাহাড়ি অঞ্চল, যা রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মেঘের রাজ্যে অবস্থান করছে সাজেক ভ্যালি। এই ভ্যালির বিশেষত্ব হলো এখানে প্রতিদিনই মেঘ আর সূর্যের খেলা দেখা যায়। সাজেক ভ্যালির ভোরের সূর্যোদয় এবং বিকেলের সূর্যাস্ত এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে। পর্যটকরা এখানে এসে মেঘের স্পর্শ পেতে পারেন এবং পাহাড়ের শীতল বাতাসে হারিয়ে যেতে পারেন।

৫. লালাখাল, সিলেট

লালাখাল সিলেটের জাফলং থেকে কিছু দূরত্বে অবস্থিত একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান। এখানে মূলত নদীর পানি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বিশেষত বর্ষাকালে এখানে পানি থাকে সবুজাভ নীল। নৌকা ভ্রমণ করে এই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। লালাখালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সেখানকার গ্রামীণ পরিবেশ শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি দিতে পারে।

৬. নাফাখুম জলপ্রপাত, বান্দরবান

বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত হলো বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত। এটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত এবং সাঙ্গু নদী থেকে উৎপন্ন হয়। নাফাখুম যাওয়ার জন্য আপনাকে ট্রেকিং করতে হবে, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হলেও একবার সেখানে পৌঁছালে এর সৌন্দর্য সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। প্রাকৃতিক শোভায় ভরপুর এই জায়গাটি বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

৭. নীলাচল, বান্দরবান

বান্দরবানের নীলাচল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন স্থান, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এখান থেকে আপনি পুরো বান্দরবান শহরের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবেন। মেঘ আর পাহাড়ের মেলবন্ধন নীলাচলকে করে তুলেছে প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। বিশেষত বর্ষাকালে এখানে মেঘে ঢেকে থাকা পাহাড়ের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

৮. চর কুকরি মুকরি, ভোলা

ভোলার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত চর কুকরি মুকরি একটি লুকানো রত্ন, যা খুব কম পর্যটকই জানেন। এটি মূলত একটি দ্বীপ, যেখানে বঙ্গোপসাগরের পানির সাথে সবুজের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। এখানে জোয়ার-ভাটার সময় নদীর পানিতে মাছ ধরার দৃশ্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পাখির কিচিরমিচিরে ভরপুর এই জায়গাটি সত্যিই এক শান্তিময় অবসর উপভোগ করার আদর্শ স্থান।

উপসংহার

বাংলাদেশের অনেক লুকানো সৌন্দর্য এখনো সাধারণ পর্যটকদের কাছে অপরিচিত। এসব স্থান শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপহার দেয় না, বরং ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। দেশের এই অজানা রত্নগুলোকে আবিষ্কার করা এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই, আপনার আগামী ভ্রমণে এসব স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে ভুলবেন না ..

Post a Comment

0 Comments